ত্রিপুরা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ে মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার স্পষ্ট বার্তা মিলেছে। আগরতলার কুঞ্জবন এলাকার স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার শাখা ব্যবস্থাপককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত এক সিআরপিএফ জওয়ানের pension অবৈধভাবে বন্ধ রাখার কারণে। ২০১২ সালে অবসর নেওয়া মহেশ লাল যাদবের pension ২০২২ সাল থেকে কোনো লিখিত নির্দেশ বা বৈধ কারণ ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাদব বহুবার ব্যাংকে যোগাযোগ করেও কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাননি। অথচ, যে মামলার তদন্তের ভিত্তিতে তাঁর pension বন্ধ করা হয়েছিল, সেই মামলাতেই তিনি ইতিমধ্যে খালাস পেয়েছেন।এই ঘটনাটি শুধু একটি প্রশাসনিক অবহেলার পরিচায়ক নয়, বরং তা একজন নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের সামিল। পেনশন একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, যা তার দীর্ঘ কর্মজীবনের প্রতিদান। এটি বন্ধ করা মানে তাঁর জীবিকার অধিকার হরণ করা, যা সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্ধারিত ‘জীবনের অধিকার’ লঙ্ঘন করে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী, বয়োজ্যেষ্ঠদের সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র বাধ্য—এই প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা শুধুই প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি টি. অমরনাথ গৌরের রায় তাই শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত বিচার পাওয়ার উদাহরণ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেয়। রায়ে বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার বেতন থেকে কেটে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এই পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দেয়—জনসেবা প্রদানকারী কোনো প্রতিষ্ঠান যদি অসতর্কতা, অবহেলা কিংবা অন্যায়ভাবে কোনও নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে, তবে তার পরিণতি ভোগ করতেই হবে।এই রায় ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি কেবল মহেশ লাল যাদবের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেনি, বরং সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—অধিকার রক্ষায় আদালত সবসময় পাশে থাকবে। মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে এই রায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা আইনের শাসনের প্রতি আস্থা জোরদার করবে।
অবসরের পরে অবিচার—Pension রুখে দিলেই মিলবে শাস্তি
