ডিজিটাল লেনদেনে কর নজরদারি: করদাতাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

ভারতের আয়কর বিভাগ ডিজিটাল লেনদেনে নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধের লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। নতুন আয়কর বিল ২০২৫-এ প্রস্তাবিত একটি ধারা কর কর্তৃপক্ষকে করদাতাদের ডিজিটাল কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেবে। এই পরিবর্তনের ফলে ইমেল, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন বিনিয়োগ, ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক লেনদেনের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কর কর্তৃপক্ষের প্রবেশাধিকার থাকবে। কর ফাঁকি রোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।বর্তমান আয়কর আইনে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে করদাতাদের ব্যক্তিগত ডিভাইস পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলেও ডিজিটাল ডেটার উপর সরাসরি নজরদারির কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল না। নতুন প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী, কর কর্তৃপক্ষ “ভার্চুয়াল ডিজিটাল স্পেস” ব্যবহার করে অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবে, যা আগের তুলনায় অনেক বিস্তৃত পরিধি তৈরি করবে। যদিও সরকার এই পরিবর্তনকে কর ফাঁকি রোধের জন্য জরুরি হিসেবে দেখছে, তবে এটি নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ডিজিটাল গোপনীয়তার সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা হলে, এটি সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে অযাচিত হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করবে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ করদাতাদের মধ্যে আরও জবাবদিহিতা আনতে পারে, তবে গোপনীয়তার বিষয়টি যথাযথভাবে রক্ষা করা না হলে এটি বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যেই ডিজিটাল গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও কর কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধুমাত্র সন্দেহভাজন কর ফাঁকির ক্ষেত্রেই এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে এবং নিরীহ নাগরিকদের উপর অযাচিত নজরদারি চালানো হবে না, তবে সংশ্লিষ্ট আইন ও নিয়ম-কানুনের স্বচ্ছ ব্যাখ্যা না থাকলে এটি নিয়ে অস্পষ্টতা থেকেই যাবে।বর্তমানে বিলটি সংসদের নির্বাচিত কমিটির পর্যালোচনার অধীনে রয়েছে, এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে এই বিষয়ে আরও আলোচনা হতে পারে। ডিজিটাল যুগে কর ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জরুরি হলেও, নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্ব পাওয়ার দাবি উঠছে। এই আইনের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে এবং করদাতাদের জন্য এটি কতটা স্বচ্ছ ও ন্যায্য হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *