১৪ মার্চ ২০২৫-এর পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ: জ্যোতির্বিজ্ঞান ও হিন্দু পুরাণের আলোকে করণীয় ও বর্জনীয় বিধান

১৪ মার্চ ২০২৫-এ এক বিরল পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ সংঘটিত হতে চলেছে, যেটি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে খালি চোখে দেখা যাবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে চন্দ্রগ্রহণ একটি স্বাভাবিক মহাজাগতিক ঘটনা, যা তখন ঘটে যখন পৃথিবী, চাঁদ এবং সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ে। গ্রহণ চলাকালীন চাঁদ একটি লালচে আভা ধারণ করে, যা “ব্লাড মুন” (Blood Moon) নামে পরিচিত। এই লালচে রঙের কারণ হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে সূর্যালোকের প্রতিসরণ এবং বিক্ষেপণ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন যে এই চন্দ্রগ্রহণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি একটি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। গ্রহণের সময় চাঁদ সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়বে, যা বিরলভাবে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। গ্রহণটি শুরু হবে রাতের প্রথমভাগে এবং কয়েক ঘণ্টা ধরে স্থায়ী হবে। নাসা এবং অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থাগুলি এই ঘটনাটিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং গ্রহণ চলাকালীন চাঁদের পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতা এবং রঙের পরিবর্তনগুলি বিশ্লেষণ করবে।

অন্যদিকে, হিন্দু পুরাণ এবং বাস্তু শাস্ত্র অনুসারে চন্দ্রগ্রহণকে কেবলমাত্র একটি জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনা হিসেবে নয়, বরং আধ্যাত্মিক এবং শক্তির বিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। পুরাণ অনুসারে, চন্দ্রগ্রহণ দেবতা রাহু ও কেতুর অভিশাপের ফল। কাহিনী অনুসারে, দেবতাদের অমৃত পান থেকে বঞ্চিত করার কারণে রাহু এবং কেতুকে ভগবান বিষ্ণু শাস্তি দেন। রাহু এবং কেতু চাঁদ এবং সূর্যের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করে গ্রহণ সৃষ্টি করে বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই গ্রহণ চলাকালীন সময়ে নেতিবাচক শক্তির আধিপত্য বৃদ্ধি পায় বলে মনে করা হয়।

গ্রহণ চলাকালীন কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলা উচিত। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে গ্রহণের সময় উপবাস রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ে খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে নেতিবাচক শক্তির প্রবেশ ঘটতে পারে। গ্রহণ শুরুর আগে খাবার প্রস্তুত করে রাখতে এবং গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে পবিত্র স্নান গ্রহণ করে তা গ্রহণ করা বিধেয়। তুলসী পাতা এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রহণের আগে রান্না করা খাবারে তুলসী পাতা দিয়ে রাখা হয়, কারণ তুলসী নেতিবাচক শক্তিকে দূর করে এবং খাদ্যকে শুদ্ধ রাখে বলে বিশ্বাস করা হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বাস্তু শাস্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই গ্রহণ চলাকালীন আকাশের দিকে খালি চোখে না তাকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন যে গ্রহণ চলাকালীন চাঁদের রং পরিবর্তনের কারণ হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে সূর্যালোকের বিক্ষেপণ, যা চাঁদের রঙকে লালচে করে তোলে। অন্যদিকে, হিন্দু পুরাণ অনুসারে এটি রাহু ও কেতুর ছায়ার প্রভাব বলে বিবেচিত হয়। তাই গ্রহণ চলাকালীন গর্ভবতী মহিলাদের বাইরে যাওয়া বা আকাশের দিকে তাকানো এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

গ্রহণ চলাকালীন সময়ে জপ ও প্রার্থনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র এবং গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে রাহু ও কেতুর অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে পবিত্র গঙ্গা স্নান, দান এবং ব্রাহ্মণ ভোজন করলে নেতিবাচক শক্তি দূর হয় এবং জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়ার ফলে চাঁদের আলো ম্লান হয়ে যায়। তবে এই ঘটনাটি মহাবিশ্বের সৌন্দর্য এবং গ্রহগুলির চলাচলের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের প্রতীক। অপরদিকে, হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে এটি আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধির সময়। গ্রহণের সময় উপবাস, প্রার্থনা এবং আত্মবিশ্লেষণ মানুষের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষা দেয় বলে মনে করা হয়।

১৪ মার্চ ২০২৫-এর পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনা হলেও, এটি হিন্দু পুরাণ এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। তাই এই বিশেষ মুহূর্তে শাস্ত্রের নির্দেশিত নিয়ম এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উভয়ই মাথায় রেখে চললে জীবনে ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *